Tuesday, September 27, 2011

আমার পুজো

ফোন, এস এম এস, ই মেল, অনেক কিছু দিয়ে চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুতেই যা লিখতে চাইছি লিখে উঠতে পারছি না| তোর বাড়ির ঠিকানা গেছি ভুলে, লেখা শেষ হলে চেয়ে নেবো|

অনেকদিন পর কাগজ, পেন নিয়ে লিখছি | বাংলায় লিখছিও অনেকদিন পর| মনের ঠিক নেই, তাই যা লিখছি তার মানে নাও হতে পারে | তুই নাহয় তোর মত করে সাজিয়ে নিস| আমি জানি তুই ঠিক পারবি|

আজকের দিনটায় আমার সোনার বাংলা ঠিক যেন পুজোর ম্যারাথন শুরু করে| মহালয়া হলো সেই রেসের বাঁশির মতন |ভোরেরবেলার স্তোত্র সে বাঁশি বাজায়, আর সারা বাংলার গরীব,বড়লোক, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সেই দৌড়এ সামিল হয়! শেষ বেলার কেনাকাটা, আলতা- সিন্দুর, মিষ্টি, নারকেল নাড়ুর সাথে মিশে থাকা কর্পূর এর গন্ধ.....সবাই একসাথে জানান দেয় পুজো এসে গেল| ধানের ক্ষেতের সোনালী রোদে,সাদা কাশফুলের আল্হাদ মাখা পুজো, যেন এক ছোট্ট মেয়ে- যে এক্কা দোক্কা খেলতে খেলতে, একটা একটা করে ছোট ছোট চৌকো ঘর পার হয়ে ক্রমশ এগিয়ে আসছে....ষষ্ঠীর দিন সকালে ঠিক এসে দুয়ারে কড়া নাড়বে|

দেশে না থাকলে তবেই দেশের মর্ম বোঝা যায়|যে পুজো আমার দেশ,আমার সংস্কৃতির সাথে নিশ্বাসের মত করে জড়িয়ে থাকে, বাংলা থেকে উনিশশো কিলোমিটার দুরে সেই পুজোকে আমি দু হাত দিয়ে আজ যতই আঁকড়ে ধরতে চাইছি, সে ততই দুরে চলে যেতে চাইছে. হাত আমি যতই উন্মুক্ত করিনা কেন, সে ধরা দেবেই না!

আজ সকালে টি ভি তে মহালয়ার অনুষ্ঠান শুনে মনে হলো, "কেন এ ভুল করলাম! কেন বাড়ি গেলাম না?" এতদিন ধরে যে অনুভূতি একটা চোরাস্রোতের মত আমার চেতনার আড়ালে অস্ত্রে শান দিছিল, আজ সে খড়্গহস্তে আমাকে যেন বলি দিতে চাইছে!

বিধাতার রঙ্গও কম নয়! এখানে পুজোর কোনো উন্মাদনা নেই, পুজোর কোনো ছাপ নেই, কিন্ত শরতের কড়া রোদ, আকাশে প্যাজা তুলোর মত মেঘ, সবাই একসাথে হাজির | আমি ভুলতে চাইলে কি হবে? ভুলতে দিছে কে!

সবার কি পুজোর জন্য এত মন খারাপ করে? কে জানে? আমি তো চোখ খুলে, চোখ বন্ধ করে, আমার বাড়ির সামনের মাঠটাকে, Modern decorators এর শেষ রঙে রাঙানো pandalটাকে, মিষ্টির দোকানের উপচে পড়া ভীড়, গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট এর জনারণ্য, পা ফেলতে না দেওয়া ফুটপাথ,হকার্সদের বিকিকিনি......সব স্পষ্ট দেখতে পাই, কানে শুনতেও পাই |

মানুষ তার জীবনের এক এক সময়ে বিভিন্ন অনুভূতিতে নিজের অস্তিত্বকে জারিত করে| একটা একটা করে বছর যায়, সে উপলব্ধিও বদলে যায় আজ জীবনের অনেকগুলো বছর পিছনে ফেলে এসেছি. অনেকগুলো বছর কলকাতার বাইরে থেকেছি, আরো হয়ত থাকতেও হবে, তবু এ উপলব্ধি সূর্যের মত সত্যি আর তাই স্বীকার করতে লজ্জা হয়না| আমি বুঝি জানিস, আমি ভীষণভাবে কলকাতার সন্তান|গঙ্গার ধার, মেঠো চায়ের ভাড়, আমার বাড়ি, বাড়ির ছাদের সারি দেওয়া গাছের গা ঘেষাঘেষি'র বুনো গন্ধ.... তুই, চান্দ্রেয়ী, কলেজ স্ট্রীট, দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পিছনে অস্ত যাওয়া সূর্যের আলো, প্রিন্সেপ ঘাট........আমি আজ যায় হই না কেন, যেখানেই থাকি না কেন, আর যেখানেই যাই না কেন, এসব ছাড়া সে আমি ঠিক আমি নই কখনই! সে আমি এক ভীষণভাবে অসম্পূর্ণ আমি |


কলমের কালি বুঝি ফুরিয়ে এলো......আজ শেষ করি!